প্রকাশিত হয়েছে Aug 12, 2023
ভোকাব্যুলারি অংশের প্রিপারেশন যেভাবে নেবেন!
Share this post

পরীক্ষার্থীদের প্রিপারেশনের পথে ভোকাব্যুলারি অংশ অনেকসময় একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেটা নিয়োগ প্রত্যাশীরা হোক আর অ্যাডমিশন প্রত্যাশীরাই হোক! কোথা থেকে পড়বো, কতোটুকু পড়বো, মুখস্থ করা শব্দগুলো কিভাবে মনে রাখবো, কিংবা কিভাবেই বা মুখস্থ করবো…অনেক অনেক সমস্যা এই ভোকাব্যুলারি অংশ নিয়ে। স্বভাবতঃই, আপনি প্রথমেই ছুটে যাবেন আপনার কোন ফ্রেন্ড অথবা পরিচিত কোন বড় ভাইয়ের কাছে যে কিনা ইতোমধ্যে কোনো না কোনো কমপিটিটিভ এক্সামে অলরেডি সফল হয়েছে, অথবা দীর্ঘদিন ধরে প্রিপারেশন নিচ্ছে। টেস্টের অন্য পার্টগুলোতে ভালো করার জন্য যা ই পরামর্শ দিক না কেন, ভোকাব্যুলারির ক্ষেত্রে সবার পরামর্শই হয় সাধারণত গৎবাঁধা। ব্যারন'স স্যাট থেকে ৩৫০০, ব্যারন'স জিআরই থেকে ৬৫০০, ওয়ার্ড স্মার্ট-১,২ (ওয়ার্ড স্মার্ট যদিও আমি নিজেও পড়তে বলি) ব্লাহ ব্লাহ। কি? পরিচিত মনে হচ্ছে না পরামর্শ গুলো? আরও গোদের উপরে বিষফোঁড়া হবার ফিলিং হয় কখন জানেন? কোন ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করলেন,"দোস্ত, প্রিপারেশন কেমন?" দোস্ত আপনার বুক ফুলিয়ে দাঁত কেলিয়ে জবাব দিলো, " জিআরই'র ৬০০০ ওয়ার্ড ঝাড়া মুখস্থ করে ফ্যালাইছি!" আপনার যাও বা কনফিডেন্স ছিলো, দোস্তের জবাব শুনে ফুস!


এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করি আপনাদের সাথে। আমি নিজে যখন আইবিএ তে অ্যাডমিশন টেস্ট দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও প্রথমে ছুটে গেলাম আমার একজন ফ্রেন্ডের কাছে, যে আগেরবার এক্সাম দিয়েছিলো (চান্স পায় নাই)। তার কাছেই জানতে পারলাম, সে এক্সাম দেবার আগে প্রায় ৫০০০ ওয়ার্ড মুখস্থ করেছিলো। শুনে তো আমার রীতিমতো ভিরমি খাবার দশা। নিজেকে আমি ভালোই চিনি। যে ছেলে শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্য পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে একটা ইয়ার ড্রপ করে দিতে পারে, তার পক্ষে চার-পাঁচ হাজার ওয়ার্ড যে অন্তত মুখস্থ করা সম্ভব না তা সে নিজেও জানে।


নিজেই নিজের পজিশন যাচাই করে দেখার চেষ্টা করে দেখলাম… ম্যাথস নিয়ে আমার তেমন কোন প্রবলেম ছিলো না। অ্যানালাইটিক্যাল সেকশন টা একটু প্র্যাকটিস করলে যে কেউই পারবে। আমার জন্য বাকী থাকলো শুধু ইংরেজী সেকশন টা। এটুকু বুঝতে পারলাম যে এই ইংরেজী সেকশন টা তে যদি কোনমতে কোয়ালিফাইং মার্কস তুলতে পারি আমি, তাহলেই কেল্লা ফতে। চট্টগ্রামে মিঠু ভাই নামে একজন ভাইয়ার কাছে মাস দুই-তিনেক ধরে পড়া শুরু করেছিলাম অলরেডি তখন। উনার সাহায্যেই গ্রামার এবং অ্যানালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটি বেশ দখলে নিয়ে এসেছিলাম। বেকায়দায় পড়েছিলাম এই ভোকাব্যুলারি নিয়ে। এটা কিছুতেই কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারছিলাম না। অনার্সের রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পরে সব মিলিয়ে আমার সামনে সময় ছিলো মাত্র ৫ মাসের মতো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে গেলাম প্রিপারেশনের জন্য। ম্যাথস বাদে অন্য সব সেকশন মোটামুটি ২/৩ মাসের মধ্যে পুরোপুরি কন্ট্রোলে চলে এলেও ভোকাব্যুলারিতে এসে ধরা খেয়ে যাচ্ছিলাম। আমার এটাও বুঝতে পারছিলাম যে ভোকাব্যুলারি সেকশনটা পুরোপুরি ছেড়ে দিলে ইংরেজীতে কোয়ালিফাইং মার্কস না পাবার সম্ভাবনা মোটামুটি ৯০%। সাইফুর'স এ সন্ধ্যার সলভ ক্লাস করতাম সপ্তাহে ২-৩ দিন (তখন সাইফুর'র ই আইবিএ'র জন্য সবথেকে নামকরা কোচিং ছিলো)। ওখানে যারা পরিচিত হয়ে গেছিলো তাদের কথা শুনলে গায়ে জ্বর চলে আসতো। সবাই ই মোটামুটি তিন থেকে পাঁচ হাজার ভোকাব্যুলারি মুখস্থ করে ফেলাইছে অলরেডি।


যাহোক, আমার অবস্থা দেখে পরিচিত একজন একটা বুদ্ধি দিলো। বললো, " ভাই, আমি আপনার অবস্থা বুঝতেছি। আপনি এতো ওয়ার্ড মুখস্থ করতে পারবেন না। আপনি হাজার খানেক ওয়ার্ড ভালোমতো মুখস্থ করে ফ্যালেন। আমার মনে হয় ওখান থেকেই বেশ কিছু কমন পেয়ে যাবেন।" সে আমাকে একটা বইয়ের সন্ধান ও দিয়ে দিলো। তৎকালীন সাইফুর'স এমবিএ গাইড। ওই বইয়ের প্রথম দিকে "ভোকাব্যুলারি রিভিউ" বলে একটা পার্টে প্রায় শ' পাঁচেক শব্দের একটা লিস্ট ছিলো। তারপর ডিফিকাল্টি লেভেল অনুযায়ী লেভেল-১, লেভেল-২ আর লেভেল-৩ হেডিংয়ে আরও প্রায় ৫০০-৬০০ শব্দের তিনটি লিস্ট ছিলো। আমি খুব কষ্ট করে এই সবগুলো ওয়ার্ড মুখস্থ করে ফেললাম। প্রতিদিনের সিংহভাগ সময়ই ব্যয় করতাম এই ভোকাব্যুলারি গুলো আয়ত্ব করার পিছনে। শেষের দিকে এসে এই হাজার খানেক ওয়ার্ড এমনভাবে মুখস্থ করে ফেললাম আমি, এর মাঝে একটা আসলে ওই একটাই পারবো আমি।

পরে এই অল্পস্বল্প ভোকাব্যুলারিই সব এক্সামে আমার কাজে লেগেছিলো। আমার জীবনে এ পর্যন্ত পাঁচবার বিভিন্ন অ্যাপটিচিউড টেস্ট ফেইস করেছি আমি, সবগুলোতেই এই হাজারখানেক ওয়ার্ড থেকেই কমন পেয়েছি। আমার প্রথম পরীক্ষাটা ছিলো বিআইবিএম, সেখানে ১০ টা ভোকাব্যুলারি প্রশ্নের মধ্যে ৭ টা কমন পেয়েছিলাম এখান থেকে। এরপর আইবিএ তে ১০ টার মধ্যে ৫-৬ টা (প্রথমবার আইবিএ থেকে ভাইবাতে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম)। পরের বারেও আইবিএ তে ৫-৬ টা ভোকাব্যুলারি কমন পেয়েছিলাম। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক, আমার জীবনে দেওয়া প্রথম চাকুরীর জন্য পরীক্ষা। এখানে কয়টা কমন পেয়েছিলাম এক্স্যাক্টলি মনে নেই। তবে এখানেও বেশ কয়েকটি কমন পেয়েছিলাম। এরপরে একটি প্রাইভেট ব্যাংকের পরীক্ষায় বসেছিলাম, যেটার ১০ টি ভোকাব্যুলারির সব কয়টিই আগে মুখস্থ করা সেই হাজার খানেক ওয়ার্ড থেকেই কমন পেয়েছিলাম।


পরে যেটা খেয়াল করে দেখলাম সেটা হলো, যেসব পরিচিত মানুষেরা তখন বলেছিলো হাজার হাজার ভোকাব্যুলারি হজম করে ফেলেছি, তারা কেউই ভালো কোন জায়গায় টিকে নাই। তাদের একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম, যারা এরকম ৬-৭ হাজার করে ওয়ার্ড মুখস্থ করার চেষ্টা করে, তাদের আসলে কিছুই মুখস্থ হয় না। র‍্যানডম একটা ওয়ার্ডের অর্থ জিজ্ঞেস করেন তাকে…পারবে না। আমার পরিচিত যারা বলতো যে তারা ৪-৫ হাজার করে ভোকাব্যুলারি মুখস্থ করেছে তাদের থেকে আমি পরীক্ষার হলে বেশী কারেক্ট করে আসতাম, মাত্র হাজারখানেক মুখস্থ করেই!

সুতরাং, আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, এরকম হাজার হাজার ওয়ার্ড মুখস্থ করার চেষ্টা না করে অল্প কিছু হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড মুখস্থ করেন। হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড বলতে কোন একটা স্পেসিফিক এক্সামে যেসব ভোকাব্যুলারিগুলো বারবার আসে সেগুলোকে বুঝায়। তবে, আপনি যদি ব্যাংক জব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, কিন্তু, জিআরই’র হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড মুখস্থ করতে শুরু করেন, তাহলে সেটা মশা মারতে কামান দাগার মতো হয়ে যাবে। তবে, কামান দাগার মতো হলেও লস নেই। যা ই শেখেন না কেন, জীবনের কোনো না কোনো জায়গায় সেটা একসময় কাজে লেগে যেতে পারে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি স্পেসিফিক যে ধরণের এক্সামের প্রিপারেশন নিতে চাচ্ছেন সেধরণের এক্সামে গত ১০ বছরে যেসব ওয়ার্ড চলে এসেছে, সেগুলোকে একসাথে করে মুখস্থ করলে।


আর...বিভিন্ন সোর্স থেকে সার্চ করার ওই পরিশ্রমটুকু করতে না চাইলে আমার মতো তৎকালীন সাইফুর'র এমবিএ গাইডের ওই পার্টটুকুকেই টার্গেট করতে পারেন। আবার, কমপিটিটিভ এক্সামগুলোর অন্য পার্টগুলোতে এমফেসাইজ না করে শুধু হাজার হাজার ভোকাব্যুলারি মুখস্থ করার পিছনে ছোটা কে আমার কাছে বোকামী ছাড়া কিছু মনে হয় না। ভাই, এর পিছনে এতো সময় নষ্ট না করে বরং ম্যাথস শেখেন। যে ম্যাথস পারে, তাকে দুনিয়াতে কেউ আটকাতে পারবে না। কোন জায়গাতেই না। ভোকাব্যুলারির জন্য অল্প কিছু সময় বরাদ্ধ রাখবেন নিয়মিত রিভিশন করার জন্য জাস্ট।



যাহোক, ফাইনালি আমার পরামর্শ হলো, হাজার হাজার ওয়ার্ডের পিছনে না দৌঁড়িয়ে অল্প কিছু সিলেক্টেড ভোকাব্যুলারি ভালো করে শেখেন। যতটুকু শিখবেন, সময় নিয়ে সেটাকে প্রতিদিন রিভিশন করতে হবে। একদিন না করলেই ভুলে যাবেন অনেকটা। ভোকাব্যুলারির বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, আপনি যতটুকুই শেখেন না কেন সেটাকে আপনার প্রতিদিনই রিভিশন করতে হবে। নাহলে পরীক্ষার হলে সেটাকে এফিসিয়েন্টলি কাজে লাগাতে পারবেন না। অবশ্য, আমার ক্ষেত্রে প্রতিদিন রিভিশন করতে হইছে বলে ব্যপারটা এরকম ও না যে আপনার ক্ষেত্রেও করতে হবে। একেকজনের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ইউজ করার ক্যাপাবিলিটি একেকরকম। আপনার টা আপনার নিজেকেই বুঝে নিতে হবে ভালোভাবে।


আমার পড়া ভোকাব্যুলারির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড লিংকঃ https://cutt.ly/dwfMTPSM




#Bank Job Preparation in Bangladesh

#Bangladesh Bank Assistant Director Recruitment Preparation

#IBA Admission Test Preparation

#Combined Bank Exam Preparation