প্রকাশিত হয়েছে Aug 18, 2023
ম্যাথ দেখলে বুক কাঁপে?
Share this post

কমপিটিটিভ এক্সামগুলোর ম্যাথ পড়াচ্ছি প্রায় ১২ বছর হয়ে গেলো। শুরুতে ঢাকার নামকরা একটা কোচিং এ পড়াতাম জিম্যাটের ম্যাথ। তারপর পড়ানো শুরু করলাম আইবিএ ভর্তি পরীক্ষা এবং ব্যাংক জবের ম্যাথ। ডিমোশন হলো আর কি!

পড়াতে ভালো লাগে, এখনও পড়ানোর সেটাই সবচেয়ে বড় কারণ । নিজে এখনও জেনারেল ম্যাথস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পছন্দ করি, নতুন নতুন জিনিস শিখতে পছন্দ করি৷ যতটুকুই জানি সেটা মানুষকে শিখাতে ভালো লাগে।


যাহোক, এই ১২ বছরে অনেক ধরণের স্টুডেন্ট পড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে। কেউ বুয়েটের বা ঢাকা ইউনিভার্সিটির টপ ডিপার্টমেন্ট থেকে গ্রাজুয়েশন করা; কেউ বা আবার পাসকোর্সের ছাত্র! এমনকি জিম্যাটের ম্যাথস যখন করাতাম, তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিচারকেও পড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে।


আমার স্টুডেন্টদের মধ্যে হাতে গোণা দু-চারজনকে মনে হয়েছিলো সুপার ট্যালেন্ট (আমার কাছে পড়তে আসলেও উল্টা আমাকে পড়াতে পারবে এমন), বেশ ভালো একটা অংশ মিডিওকর, তবে বড় অংশটার মধ্যেই ম্যাথ নিয়ে আলাদা ধরণের ভীতি কাজ করতো। বাই দ্যা ওয়ে, ম্যাথ দেখে ভয় পায় বলে তারা যে খারাপ স্টুডেন্ট বিষয়টা এমন না। ম্যাথ দেখলে ফোবিয়া কাজ করতো এদের মধ্যে এমনকি ঢাকা ইউনিভার্সিটির কয়েকজন টিচারও ছিলেন, কিন্তু তারা সবাই নিজ নিজ ক্লাসের টপার হয়েই ইউনিভার্সিটির টিচার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। সুতরাং, শুধুমাত্র ম্যাথে দুর্বল বলে তারা দুর্বল স্টুডেন্ট এটা বলার কোন অবকাশ নেই।

যাহোক, আমার এতদিনের এক্সপেরিয়েন্স থেকে আমি মোটামুটি তিনটি কারণ বের করেছি, যেকারণে মানুষ সহজে কমপিটিটিভ এক্সামের ম্যাথসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেনা কিংবা ভয়ে একটা সময় গিভ আপ করছে। এই তিনটি কারণ নিয়েই এই বিশাল ব্লগ। আপনি যখন একবার আইডেন্টিফাই করে ফেলতে পারবেন আপনার সমস্যাটি কি, তখন সমাধান খুঁজে পাওয়াটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যায়।


প্রথম কারণঃ ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার!

“ম্যাথস পড়ে বুঝতে পারিনা কি বলতে চেয়েছে, বা কি বুঝাচ্ছে!”…অনেকেরই খুব কমন একটি কমপ্লেইন। এদের অনেককেই যদি অন্য কেউ তর্জমা করে ম্যাথটি বুঝিয়ে দেয়, তাহলে চোখের পলকে তা সমাধান করে ফেলে। এরা একারণে সাধারণত প্র্যাকটিসের সময় ইংরেজী বইয়ের চেয়ে বাংলা ম্যাথস বইয়ের আশ্রয় নেয় বেশী। কিন্তু এটা যে উল্টা আরও ক্ষতি করছে তাদের, তা বুঝতে চায় না। ম্যাথসের টার্মগুলো ইংরেজীতে শেখার বদলে বাংলায় শিখে আরও বেশী ঝামেলা করে ফেলে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আপনি প্র্যাকটিস করার সময় নাহয় ইংরেজী ভাষার ম্যাথস থেকে পালিয়ে বাঁচলেন! পরীক্ষার সময় কি করবেন? এক বিসিএস বাদে বাদবাকী প্রায় সব এক্সামেই ম্যাথস অংশের প্রশ্নই তো পাবেন ইংরেজিতে। ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টরা অবশ্য এই সমস্যা থেকে শুরু থেকেই মুক্ত।


সমাধান কি এই সমস্যার?

“Do the thing you fear to do and keep on doing it… that is the quickest and surest way ever yet discovered to conquer fear.”…ডেল কার্নেগির এই উক্তিটাতেই বলা আছে সমাধান। আপনি একটা জিনিস করতে ভয় পান বলে যদি সেটা থেকে আপনার দুরত্ব বাড়িয়ে রাখেন, তাহলে সেই ভয় সারাজীবনই থেকে যাবে। ম্যাথের বাংলা বইগুলোকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ইংরেজীর সাথে আপনার সখ্যতা বাড়ান। শুরুতে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও ১৫-২০ দিনের মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

আর ম্যাথের প্রশ্নগুলোতে যে লেভেলের ইংরেজী ব্যবহার করা হয় সেটা যে খুব বেশী কঠিন...বিষয়টা এমন না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেন্টেন্সের স্ট্রাকচারগুলো প্রায় একই ধরণের। খুব বেশী উচ্চমার্গীয় ভোকাব্যুলারিও ইউজ করা হয়না। বাংলায় ম্যাথস প্র‍্যাকটিস হয়তো আপনাকে ম্যাথস প্র‍্যাকটিসের সময় ইন্সট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন দিচ্ছে, কমফোর্ট ফিল করছেন আপনি। কিন্তু একটা ভালো কিছু আশা করতে হলে কিন্তু আপনাকে এই কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। সময় নিন চেঞ্জড সিচুয়েশনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে।



২য় কারণঃ কনসেপচুয়াল ডেভেলপমেন্টে ঘাটতি (এটিই প্রধান সমস্যা)


আচ্ছা বলুন তো...যাবতীয় কমপিটিটিভ এক্সাম/অ্যাপটিটিউড টেস্টে (আইবিএ, ব্যাংক জব, বিসিএস কিংবা জিম্যাট-জিআরই-স্যাটসহ...সব সব) ম্যাথস আসে কোন লেভেল থেকে? সবাই জানেন উত্তরটা। স্কুল লেভেল থেকে। আরও সোজা ভাষায় বললে স্কুল লেভেলের জেনারেল ম্যাথস। ক্যালকুলাস বা ত্রিকোণমিতির অ্যাডভান্সড কোনো থিওরি থেকে কিন্তু প্রশ্ন আসবেনা এসব পরীক্ষায়। ত্রিকোনমিতি থেকে যতটুকু থাকে সেটা খুবই বেসিক লেভেলের, যা আমরা সায়েন্স, আর্টস, কমার্স সবদিকের ছাত্র-ছাত্রীরাই করে এসেছি স্কুলে। এসব এক্সামে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এনশিওর করা হয় সবসময়। এমন কোন ম্যাথ সাধারণত আসবেনা, যেটা যারা সায়েন্সে পড়েছে তারাই শুধু করে এসেছে, যারা কমার্স বা আর্টসের স্টুডেন্ট তারা কখনও চোখেও দেখেনি। তবে, স্কুল লেভেল বলতে কিন্তু বাইরের দেশের হাইস্কুল পর্যন্ত বুঝায়, যাকে আমাদের দেশে কলেজ বলা হয়। সুতরাং আমাদের এখানের এইচএসসি লেভেলের ম্যাথসের অল্প কিছু সিলেবাস (কম্বিনেটরিকস, কো-অর্ডিনেট জিওমেট্রি ইত্যাদি) কাভার করা হয় এসব টেস্টগুলোতে। তবে এখন এই টপিকগুলো সম্ভবত এসএসসি লেভেলের বইয়ে অলরেডি ইনক্লুড করা হয়েছে বলে শুনেছি।

আমার প্রশ্ন খুবই সিম্পল। এই যে জীবনভর অংক করে আসছেন, সেই একই সিলেবাসের অংক কেন পারছেন না গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে, সেটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন একবার?



আমি বলি কারণগুলো...

১।

স্কুলজীবনের অংক বইয়ের প্রতিটি চ্যাপ্টারের শুরুতে ডিসকাশন থাকতো কিছু। তারপর কিছু এক্সাম্পলস থাকতো। অনুশীলনীর অংক শুরু করার আগে কয়জন পড়েছেন সেই ডিসকাশন অংশটা? বুকে হাত দিয়ে কয়জন বলতে পারবেন যে ওই অংশটা খুব ভালোমতো পড়ে তারপর অনুশীলনীর অংক শুরু করেছেন? অনুশীলনীর অংকগুলোও করলেও শুধুমাত্র সেগুলোই করা হতো যেগুলো এক্সামে কমন পড়ার চান্স থাকতো।

কিছুটা দায়ভার আমি আমাদের স্কুলজীবনের শিক্ষকদেরকেও দিতে চাই। বেশীরভাগ শিক্ষকদেরই টেন্ডেন্সি ছিলো এমন, উনারা ক্লাসে ঢুকে বলতেন, ''এই অমুক চ্যাপ্টারের অমুক নম্বর অংকটা শুরু কর।'' তিনি হয়তো দুই-তিনটা অংক করিয়ে দিতেন। তারপরের কমন ডায়ালগ, ''বাকী অংকগুলো অমুক গাইড থেকে দেখে নিস!''

কি? মিলে যাচ্ছে কথাগুলো? মিলতেই হবে! জীবন থেকে নেয়া সব!

২।

উপপাদ্য-২৪ আগের বছরে চলে এসেছে, এবার এটা আর পড়া লাগবেনা! প্রতিটি ক্লাসেই আবার কয়েকজন সাজেশন মেকিং এক্সপার্ট থাকতো। এরা এমনভাবে সাজেশন বানাতো...যেন মনে হতো লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য কোনোভাবে চিকন চিকন কয়েকটা আন্ডারগার্মেন্টস রেখে বাকী সব ড্রেস ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে! যে যতো ছোট সাজেশন বানাতে পারবে, তার কদর বন্ধুমহলে ততো ততো বেশী! মনে পড়ে এসব?


ফলাফল কি হয়েছে?


পুরো ম্যাথস সিলেবাসের আলমোস্ট ৫০% স্কিপ করে এসেছেন। এ+ পাওয়াটাই ছিলো আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য! এজন্য এ+ ই পেয়েছেন শুধু, শেখেননি কিছুই! অতীত কখনও ক্ষমা করেনা রে…ভাই! এখন যখন ব্যাংক জবের এক্সাম দিতে যাচ্ছেন, আইবিএ তে এমবিএ ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, বিসিএস দিতে যাচ্ছেন, জিম্যাট দিতে যাচ্ছেন...সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে বসছে সেই পুরাতন সিলেবাসের ছেড়ে দেওয়া অংকগুলো। স্কুলের যে মেয়েটার দিকে জীবনেও তাকাননি সেই এখন বিশ্বসুন্দরী! প্রোপোজ না করে যাবেন কোথায়! উপপাদ্য-২৪ এর পিছন পিছন ঘুরঘুর করতে হবে এখন!

যাহোক, এই সেগমেন্টটার অনেক কিছুর উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ ছিলো সেসময়ে, আবার অনেক কিছুই আমাদের হাতে ছিলো না। হয়তো স্কুল ভালো ছিলোনা, টিচার ভালো ছিলোনা। আমরা ছিলাম পরিস্থিতির শিকার মাত্র! কিন্তু ভিকটিম কিন্তু আমরাই। মাঝখান দিয়ে ম্যাথসের কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্ট ফেইজটাই হয়নি ভালোমতো। জিপিএ ফাইভ পাওয়ার জন্য ম্যাথ করে গিয়েছি, কিন্তু প্রবলেম সলভিং স্কিলটা ডেভেলপ করেনি ভিতরে! তখন যদি বুঝতাম বুড়ো হয়েও ঘুরেফিরে সেই স্কুল লেভেলের ম্যাথসই করতে হবে, তাহলে কি আর ফাঁকি দিতাম তখন!



তা…এটার সমাধানই বা কি?

ভয়ের কিছু নেই। ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ারের ক্ষেত্রে এটা বলা যায় যে দুনিয়ার কোন শিক্ষকই আপনাকে হেল্প করতে পারবেনা, আপনি নিজেই নিজেকে হেল্প করা ছাড়া। কিন্তু এক্ষেত্রে চাইলেই কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে দিতে পারবেন এমন কারও হেল্প নিতে পারেন। কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্টে জোর দিয়ে পড়ায় এমন কোন টিচারের কাছে পড়তে পারেন; আবার চাইলে সময় নিজে নিজে নিজেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এটার জন্য অভ্যাস চেঞ্জ করার মতো কোন কঠিন প্রসেসে যেতে হবেনা। তবে চাই সংকল্প, একাগ্রতা আর কঠিন পরিশ্রম।



নিজে নিজে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে কি করতে হবে আপনাকে?


স্কুল লাইফের পড়াশোনায় ফাঁকি মেরে এসেছেন, সেই ফাঁকিগুলোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সরাসরি স্কুল লেভেলের বই থেকে আবার প্র্যাক্টিস করতে পারলেও চলে, আবার কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে জিম্যাট-জিআরই-স্যাটের অংক শিখলেও চলে। যে যেভাবে কমফোর্ট ফিল করেন। আনফরচুনেটলি আমাদের লোকাল মার্কেটে জবের প্রিপারেশনের জন্য যেসব বই আছে সেগুলোর কোনোটাতেই কনসেপ্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। বড়জোর দু-একটা বইয়ে ডিরেক্ট কিছু নিয়ম এবং ফর্মুলা তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকী সব বইকে জাস্ট সল্যুশন ম্যানুয়াল বলতে পারেন। বিভিন্ন সোর্স থেকে হাজার হাজার ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম কম্পাইল করে সেগুলোর জাস্ট সল্যুশন করে দেওয়া হয়েছে। 

এনিওয়ে, জিম্যাট-জিআরই-স্যাটের বইয়েও ইনিশিয়াল লেভেলের আলোচনা খুব একটা পাবেননা, সামারাইজড কিছু নিয়ম-কানুন পাবেন। কারণ, তারা ধরেই নেন যে আপনি স্কুল লাইফের টা স্কুল লাইফেই শিখে এসেছেন। এসব বইয়ে জাস্ট রিক্যাপ করা হয় স্কুল লাইফে পড়া ম্যাথের নিয়মগুলো। একদম গোড়া থেকে শেখার একটাই উপায়…ব্যাক টু দ্যা স্কুল লাইফ; মানে, স্কুল লেভেলের ম্যাথস আবার দফারফা করে ফেলা। তবে বাংলা বই না অবশ্যই। আমাদের দেশী সিলেবাস কাভার করতে চাইলে এনসটিবি’র ইংলিশ ভার্সনের বইগুলো শেষ করতে পারেন। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে এক্কেবারে ঝকমকা পিডিএফ ফাইল পেয়ে যাবেন (আমি ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিচ্ছি)। এই সোর্স থেকে হয়তো পুরোটা সাপোর্ট পাবেননা, অনেক কিছু নিয়ে অনেক জিজ্ঞাসা থেকে যাবে মনের মধ্যে। সেক্ষেত্রে গুগল, ইউটিউবের হেল্প নেবেন।


আর কেউ যদি খুব ভালোভাবে হাতে সময় নিয়ে ম্যাথসের ভুত তাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে আমি বৃটিশ কারিকুলামের (ক্যাম্ব্রিজ সিলেবাস) গ্রেড সিক্স থেকে এইটের জেনারেল ম্যাথস বইগুলো শেষ করে ফেলতে বলবো।  কোন ম্যাথসে আটকে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা মাথা খাটিয়ে সলভ করবেন দরকার হলে। কারও হেল্প নেবেন না। মনে রাখবেন, আপনি নিজে চেষ্টা করে সলভ করলে আপনার নিজের চিন্তার জট খুলবে, আরেকজনের হেল্প নিয়ে করলে তার ব্রেইনের জট খুলবে।


তৃতীয় কারণঃ ক্যালকুলেশনে অদক্ষতা


এটা এমন কোন কারণ না যেটার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা ম্যাথসকে ভয় পায়। বরং এটিকে আমি বিভিন্ন পরীক্ষায় ম্যাথস অংশে ভালো না করতে পারার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। এটি ম্যাথসকে আপনার কাছে কখনও ফোবিয়া বানিয়ে দেবেনা, কিন্তু এই জায়গাটাতে দক্ষতা না থাকলে আপনি নিজের অজান্তেই কমপিটিটিভ এক্সামগুলোর ম্যাথস অংশে খারাপ করবেন নিশ্চিতভাবে। কেউ ঠেকাতে পারবেনা।


একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুনতো বিষয়টা- যেকোন অ্যাপটিটিউড টেস্টে আপনাকে যে জিনিসটার সাথে মূলত যুদ্ধ করতে হবে তা হলো সময়। সময়ই দু'জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। অংকপ্রতি ৫ মিনিট করে সময় দেওয়া হলে পরীক্ষার হলের ৬০% পরীক্ষার্থী প্রায় সব অংকের সঠিক উত্তর বের করে ফেলতে পারবে। কিন্তু আসলে কি অতোটা সময় পাবেন? তাহলে? পরীক্ষার হলে আপনি একটা অংক করার জন্য গড়ে সময় পাবেন কতটুকু?


আমি ধরে নিচ্ছি, ম্যাথস বাদে অন্য পার্টগুলোর উত্তর চোখের পলকে করে ফেললেও বড়জোর এক মিনিট কুড়ি সেকেন্ড করে সময় পাবেন আপনি একটা অংক করতে। এবার ধরুন, একটা অংকের শেষে গিয়ে আপনাকে ২৬x২৮ এই ক্যালকুলেশনটি করতে হবে। এই ক্যালকুলেশনটি করার জন্য কতটুকু সময় নেওয়া উচিৎ হবে আপনার। কেমন হবে যদি ১৫ সেকেন্ড ধরে এটাই ভেবে বের না করতে পারেন যে ২৬ এর নীচে ২৮ কে বসিয়ে গুণ করবেন, নাকি ২৮ এর নীচে ২৬ কে বসিয়ে গুণ করবেন? তারপর সেই গুণ করতে লাগবে আরও ২০ সেকেন্ড! চিন্তা করেছেন একবার, অংকটি করতে সময় বরাদ্ধ ছিলো ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড (৮০ সেকেন্ড); এর মধ্যে ৫০% সময় তো খেয়ে দিলেন এক সামান্য গুণ করতে গিয়ে! তাহলে অংকটির মূল অংশ কখন করবেন? ফলাফল কি জানেন? ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের জায়গায় আপনার অংকপ্রতি সময় লেগে যাচ্ছে ২ মিনিট করে। তারমানে আপনি প্ল্যান করেছিলেন ৩৪ মিনিটে ২৫ টি অংক করবেন; কিন্তু পারলেন ১৭ টি করতে। ছোট্ট একটি অদক্ষতার কারণে ৮ টি অংক, মানে ৮ মার্ক কম পাচ্ছেন আপনি একটা পরীক্ষায়! এটাকে উল্টাভাবে ভাবলে...যে ক্যালকুলেশনে ভালো সে আপনার চেয়ে জীবনযুদ্ধে ৮ মার্কস এগিয়ে গেলো।


সমাধান কি?


এ সমস্যার রাতারাতি কোন সমাধান নেই। চাইলেই আপনি আলাদীনের চেরাগ পেয়ে রাতারাতি ফাস্ট ক্যালকুলেশন শিখতে পারবেন না। মনের বিকলাঙ্গতা দূর করতে হবে প্রথমে। একজন বিকলাঙ্গ মানুষ যেমন ক্র‍্যাচ ছাড়া চলতে পারেনা, আপনিও যদি তেমনি ক্যালকুলেটর ছাড়া ক্যালকুলেশন না করতে পারেন, তাহলে আপনি যে মানসিকভাবে কিছুটা বিকলাঙ্গ তা না বলে পারছিনা আমি। দুনিয়াতে ক্যালকুলেটর নামে কোন যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছিলো সেটা আজ থেকে ভুলে যান। আমার ম্যাথস ক্লাসে যদি কোন স্টুডেন্টকে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দেখি, তার জন্য বাই ডিফল্ট কঠিন একটা ঝাড়ি বরাদ্ধ হয়ে যায়। ক্যালকুলেশনের ছোট ছোট ট্রিকস শেখার জন্য বইয়ের হেল্প নিতে পারেন (Secret of Mental Maths বইটি বেস্ট। গতদিনের পোস্টে পিডিএফ শেয়ার করেছিলাম)। রেগুলার প্র্যাকটিস করলে আপনিও হয়ে যাবেন এক্সপার্ট।


উপরের পরামর্শগুলো মেনে চলুন, আশা করি ম্যাথ নিয়ে আর ভয়ে থাকতে হবেনা আপনাদের।


এনসিটিবি'র ম্যাথ বইগুলোর পিডিএফ পাবেন এই লিংকেঃ https://cutt.ly/hwhyEWGi




#Bank Job Preparation

#IBA Admission

#Bangladesh Bank AD

#Combined Bank